তারিখ

কুমিল্লায় এখন সময়

,বঙ্গাব্দ
Welcome To My Websites

রাসূল (সাঃ) এর বিদায় হজ্বের ভাষন


৯ই জিলহজ্ব দশম হিজরী মহানবী (সাঃ) প্রায় একলক্ষ বিশ হাজার লোকের সমাবেশে তাঁর ঐতিহাসিক বিদায় হজ্বের খুতবা বা ভাষণ প্রদান করেন। তিনি বলেনঃ-
•••মানুষের রক্ত তথা জান ও মাল এবং পরকাল সম্পর্কে:-
১। হে মানব মন্ডলী! তোমরা আমার কথাগুলো মন দিয়ে শ্রবণ কর; কেননা, আমি এবছরের পর এ স্থানে তোমাদের সাথে পুনরায় নাও মিলিত হতে পারি।
২। আগত ও অনাগতকালের হে মানব মন্ডলী! যতক্ষন পর্যন্ত তোমরা তোমাদের প্রভূর সাথে মিলিত না হচ্ছো তোমাদের রক্ত ও তোমাদের ধন-সম্পদ এই দিন ও এই মাসের মতই পবিত্র।
৩। নিশ্চয়ই তোমরা তোমাদের প্রভূর সাথে মিলিত হবে। যখন তোমাদের প্রভূ তোমাদের কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন এবং আমি তোমাদেরকে তাঁর সংবাদ পৌঁছে দিয়েছি।
•••সামাজিক কর্তব্য সম্পর্কে:-
৪। যে ব্যক্তি অন্যের ধন-সম্পদের অভিভাবক বা আমানতদার তার উচিত (মূল মালিককে) তার ধন-সম্পদ ফিরিয়ে দেয়া।
৫। সুদের লেনদেন হারাম, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই। কারও প্রতি অত্যাচার করোনা ও অত্যাচারিত হয়োনা।
৬। আল্লাহর সিদ্ধান্ত- সুদ বাতিল এবং যে সমস্ত সুদ পাওনা রয়েছে তা সবই বাতিল।
৭। অজ্ঞতা যুগের খুনের ক্ষতিপূরণ সবই বাতিল হলো।
৮। হে মানব মন্ডলী! শয়তান এদেশে পূজিত হওয়ার আশা ত্যাগ করেছে, সে অন্য দেশে মান্য হবে। সুতরাং তোমরা তোমাদের বিশ্বাস (ঈমান) সম্পর্কে সতর্ক থাকবে, যেন তোমাদের ভাল কাজগুলো অন্য লোকের দ্বারা নষ্ট হয়ে না যায়।
৯। হে মানব মন্ডলী! পবিত্র মাসের রহিতকরণ অন্ধকার যুগেরই ধারা। যারা অবিশ্বাস্য পছন্দ করে তারা বিভ্রান্ত। তারা বলে এক বছর পবিত্র মাস, পরের বছর অপবিত্র। তারা আল্লাহ কর্তৃক পবিত্র মাসের সংখ্যা ঠিক রাখার জন্য পবিত্র মাসকে অপবিত্র বলে। সময় ঘুরছে, যেদিন থেকে আসমান ও জমিন সৃষ্টি হয়েছে। আল্লাহ কর্তৃক মাসের সংখ্যা ১২ তাদের মধ্যে ৪টা পবিত্র, ৩টা পরপর এবং জমাদিউস সানি ও শাবানের মধ্যবর্তী মাস।
•••“স্বামী স্ত্রী সম্পর্কে”-
১০। হে মানব মন্ডলী! তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি তোমাদের অধিকার আছে; তাদেরও তোমাদের প্রতি অধিকার আছে। ঐ ব্যক্তিই শ্রেষ্ঠ, যে তার স্ত্রীর নিকট শ্রেষ্ঠ। এটা তাদের অবশ্য কর্তব্য তাদের সতীত্ব রক্ষা করা এবং অশ্লীলতা ত্যাগ করা। যদি তারা দোষী হয় তবে তোমরা তাদের সাথে সহবাস (সঙ্গম) করো না। তোমরা তাদের সংশোধনার্থে প্রহার কর- কিন্তু যেন ক্ষত-বিক্ষত না হয়ে যায়। যদি তারা অনুতপ্ত হয় (তাওবা করে) তবে তাদের খেতে দাও, পরতে দাও, তাদের সঙ্গে তখন ভালো ব্যবহার কর। তোমরা একে অন্যকে উপদেশ দিও, তোমাদের স্ত্রী-জাতির প্রতি ভালো ব্যবহার করার জন্যে। কেননা তারা তোমাদেরই অংশ বা অন্তর্ভূক্ত ও তাদেরকে আল্লাহর আমানত রূপে গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর বাক্য দ্বারাই তাদেরকে তোমাদের জন্যে বৈধ করা হয়েছে।
•••ভবিষ্যৎ সম্পর্কে:-
১১। সুতরাং হে মানব মন্ডলী ! তোমরা আমার কথাগুলো ভালভাবে অনুধাবন কর, যার জন্য আমি আমার কথাগুলো তোমাদের জন্য রেখে গেলাম। যদি তোমরা এটা দৃঢ়ভাবে গ্রহণ কর, তাহলে তোমরা কোনোদিনই বিপথগামী হবেনা। বিশেষ করে আল্লাহর আল-কুরআন ও আমার সুন্নাহ। আমি তোমাদের মাঝে কুরআন ও সুন্নাহ রেখে যাচ্ছি, তোমরা কুরআন ও সুন্নাহকে আকড়ে ধর, কখনও পথভ্রষ্ঠ হবে না।
১২। হে মানব মণ্ডলী! তোমরা আমার কথাগুলো অনুধাবন কর, নিশ্চিত করে বুঝতে। তোমরা শিক্ষা পেয়েছ প্রত্যেক মুসলমান অন্য মুসলমানের ভাই, সকল মুসলমানই এ ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ। এটা কোন মানুষের জন্যই বৈধ নয় অনুমতি ব্যতীত অন্যের জিনিস গ্রহণ করবে না। সুতরাং কেউ কারো প্রতি অবিচার করো না।
•••দন্ডবিধি ও আনুগত্য সম্পর্কে:-
১৩। একজনের অপরাধে অন্যকে দণ্ড দেয়া যায় না। অতঃপর পিতার অপরাধের জন্য পুত্রকে এবং পুত্রের অপরাধের জন্য পিতাকে দায়ী করা চলবে না।
১৪। যদি কোন নাক কান কাটা হাবসী কৃতদাসকেও তার যোগ্যতার জন্য তোমাদের আমির (নেতা) করে দেয়া হয়, তোমরা সর্বতোভাবে তার অনুগত হয়ে থাকবে। তার আদেশ মান্য করবে।
•••ধর্ম সম্পর্কে:-
১৫। সাবধান! ধর্ম সম্বন্ধে বাড়াবাড়ি করো না। এই বাড়াবাড়ির ফলে তোমাদের পূর্ববর্তী বহু জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে।
১৬। তোমরা ধর্মভ্রষ্ট হয়ে পরস্পর পরস্পরের সংগে ঝগড়া ও রক্তপাতে লিপ্ত হয়ো না। তোমরা পরস্পর পরস্পরের ভাই।
•••মানুষ ও জাতি সম্পর্কে:-
১৭। এক দেশের মানুষের উপর অন্যদেশের মানুষের তথা অনারবদের উপর আরবদের এবং আরবদের উপর অনারবদের প্রাধান্যের কোন কারণই নাই। কালো ব্যক্তিও সাদা ব্যক্তির তুলনায় শ্রেষ্ঠ নয়। তেমনি সাদা ব্যক্তিও কালো ব্যক্তির তুলনায় শ্রেষ্ঠ নয়। সমস্ত মানুষ এক আদম থেকে এবং আদম মাটি থেকে সৃষ্টি। মানুষের প্রাধান্য পাবে তাকওয়ার ভিত্তিতে।
১৮। জেনে রেখো! এক মুসলমান অন্য মুসলমানের ভাই। তাই সমগ্র বিশ্বের মুসলমান এক অবিচ্ছেদ্য ভ্রাতৃ সমাজ।
•••শেষ নবী সম্পর্কে:-
১৯। হে লোক সকল! শ্রবণ কর, আমার পর কোন নবী নাই। তোমাদের পর আর কোন উম্মত (জাতি) নাই। এ বছরের পর তোমরা হয়তো আর আমার সাক্ষাত পাবেনা। ইলম বা ওহী (ঐশী জ্ঞান) উঠে যাওয়ার পূর্বে আমার নিকট থেকে শিখে নাও।
২০। চারটি কথা স্মরণ রেখো: (ক) শিরক (আল্লাহর অংশী) করো না। (খ) অন্যায়ভাবে নর হত্যা করো না। (গ) চুরি করো না। (ঘ) ব্যভিচার করো না।
•••দাস দাসী এবং মজুরের অধিকার সম্পর্কে:-
২১। হে মানব বৃন্দ! কোন দূর্বল মানুষের উপর অত্যাচার করো না। গরীবের উপর অত্যাচার করোনা, সাবধান! কারো অসম্মতিতে কোন জিনিস গ্রহণ করো না। সাবধান! মজুরের শরীরের ঘাম শুকাবার পূর্বেই তার মজুরী মিটিয়ে দিও। তোমরা যা খাবে ও পরবে তা তোমাদের দাস-দাসীদের খেতে ও পরতে দিও। যে মানুষ দাস-দাসীদের ক্ষমা করে ও ভালোবাসে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন ও ভালোবাসেন।
২২। যে ব্যক্তি নিজ বংশের পরিবর্তে নিজেকে অন্য বংশের বলে প্রচার করে, তার উপর আল্লাহর, ফেরশতাগণের ও মানব জাতির অভিসম্পাত।
•••ইবাদত-বন্দেগী:-
২৩। শোন, তোমরা তোমাদের প্রভুর ইবাদত করবে। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত যথারীতি আদায় করবে, রমযানে রোযা পালন করবে, স্বেচ্ছায় ও খুশী মনে তোমাদের সম্পদের যাকাত দেবে, তোমাদের রবের ঘর বায়াতুল্লাহর হজ্জ পালন করবে; তাহলে তোমরা জান্নাতে দাখিল হতে পারবে।
••••••• বিশেষ-নির্দেশ••••••
“যারা উপস্থিত আছো। তারা অনুপস্থিতদের নিকট আমার এই পয়গাম পৌঁছে দিবে। হয়তো উপস্থিতদের কিছু লোক অপেক্ষা অনুপস্থিতদের কিছু লোক বেশি উপকৃত হবে।”
এরপর মহানবী (সাঃ) বলে উঠলেন - "হে আল্লাহ! আমি কি তোমার রিসালাতের গুরুভার ও নবুয়তের গুরুদায়িত্ব বহন করতে পেরেছি? হে আল্লাহ! আমি কি আমার কর্তব্য পালন করেছি?" সঙ্গে সঙ্গে বিশাল জনতা উচ্চস্বরে বলে উঠলেন হ্যাঁ! তখন আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে উঠলেন "হে আল্লাহ! তুমি আমার সাক্ষী থাক।"

Copi prom
Facebook page..

https://free.facebook.com/tuhin.malik.dr/?refid=52&_ft_=qid.6459657743221155825%3Amf_story_key.4288891819211672803%3Atop_level_post_id.1480302648725409&__tn__=C-R

Share This