তারিখ

কুমিল্লায় এখন সময়

,বঙ্গাব্দ
Welcome To My Websites

রমযান মাস কিভাবে কাটাতে হবে

(রমযানের ১ম জুনুমার বয়ান)

بسم الله الرحمن الرحيم

الحمد لله رب العالمين والصلاه والسلام على سيد المرسلين وخاتم النبيين وعلى اله واصحابه اجمعين اما بعدفقد قال الله تعالى اعوذ بالله من الشيطان الرجيم يا ايها الذين امنوا كتب عليكم الصيام كما كتب على الذين من قبلكم لعلكم تتقون ° وقال تعالى شهر رمضان الذي انزل فيه القران هدى للناس الاية:وقال النبي صلى الله عليه وسلم الصيام جنة ما لم يخرقها ،وقال صلى الله عليه وسلم :اسةكثروا فيه من اربع خصال .

মুসল্লিয়ানে কেরাম!

পবিত্র রমযান মাস শুরু হয়েছে। রহমতের মাস, মাগফেরাতের মাস এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস শুরু হয়েছে। ছওয়ার কামাই করার সিজন শুরু হয়েছে। মেহনত-মোজাহাদা করার সময় শুরু হয়েছে। যে উদ্দেশ্যে আল্লাহ পাক রমযান মাস আমাদেরকে দিয়েছেন, সেই উদ্দেশ্য যদি আমরা হাছেল করতে পারি, তাহলেই রমযানের পূর্ণ খায়র ও বরকত আমরা হাছেল করতে পারব। শরীয়তের প্রত্যেকটা আমলের একটা সহীহ উদ্দেশ্য, একটা সহীহ মাকসাদ থাকে। প্রত্যেকটা আমলের সেই সহীহ মাকসাদ যদি অর্জন করা যায়, তাহলে সেই আমলের পুরোপুরি সাওয়াব পাওয়া যায়। আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদেরকে যে রোযার বিধান দেয়া হয়েছে, এই রোযার উদ্দেশ্য কি তা আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন নিজেই বলে দিয়েছেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছেঃ

يا ايها الذين امنوا كتب عليكم الصيام كما كتب على الذين من قبلكم لعلكم تتقون

(সূরা বাকারা : ১৮৩)

অর্থাৎ, হে মু'মিনরা, তোমাদেরকে রোযার বিধান দেয়া হল; যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকেও রোযার বিধান দেয়া হয়েছিল। এই রোযার বিধান দেয়া হল এই উদ্দেশ্যে, যাতে তোমরা তাকওয়া পরহেযগারী-র অধিকারী হতে পার। তাকওয়া বা পরহেযগারী-এর অর্থ হল বিরত থাকা, সংযমী হওয়া। অর্থাৎ, গোনাহ্ থেকে বিরত থাকা, পাপের ক্ষেত্রে সংযমী হওয়া। বোঝা গেল- রোযার উদ্দেশ্য হল গোনাহ থেকে বিরত থাকা, পাপের ক্ষেত্রে সংযমী হওয়া।

রোযা দ্বারা কিভাবে মানুষ পাপ থেকে বিরত হয় ?

রোযা দ্বারা কিভাবে সংযমী হওয়া যায়? এটা জানার আগে বুঝতে হবে পাপ কিভাবে হয়। সাধারণতঃ মানুষের গোনাহ হয় পেটের কারণে কিম্বা যৌনাঙ্গের কারণে। অধিকাংশ গোনাহের সম্পর্ক হয় পেটের সাথে অর্থাৎ, খাওয়া-দাওয়ার সাথে কিংবা যৌন বিষয় সংক্রান্ত। রোযা রাখার মাধ্যমে এই দুটোকে নিয়ন্ত্রণ করার অভ্যাস গড়ে তোলা হয়।

রোযা দ্বারা শুধু যে পানাহার এবং যৌন ব্যবহারকেই নিয়ন্ত্রণ করা হয় তা নয়, সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকেই নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কারণ সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গোনাহ থেকে বিরত থাকলেই রোযা পূর্ণাঙ্গ হয়, মুখের দ্বারা যত গোনাহ্ হতে পারে সেই সব গোনাহ্ থেকে যদি বিরত থাকা হয়, চোখের দ্বারা যত গোনাহ হয় তা থেকে যদি
বিরত থাকা হয়, কানের দ্বারা যত গোনাহ্ হয় তা থেকে যদি বিরত থাকা হয়, এভাবে সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে যত গোনাহ হতে পারে সেসব থেকে যদি বিরত থাকা হয়, তাহলেই হয় পূর্ণাঙ্গ রোযা। দেখা গেল - পূর্নাঙ্গ রোযা যদি আমি রাখতে চাই, তাহলে সারা মাস আমাকে সব ধরনের গোনাহ্ থেকে বিরত থাকতে হচ্ছে, না থাকলে আমার রোযা পূর্ণাঙ্গ হচ্ছে না। বরং সেটা হচ্ছে ছেড়া ফাঁটা রোযা, ভাঙ্গা-চুরা রোযা। হাদীছে নবী (সাঃ) বলেছেনঃ

الصيام جنة ما لم يخرقها ، إبن ماجة والنسائي)

অর্থাৎ, রোযা হল ঢাল স্বরূপ, যতক্ষণ এই ঢালকে ফেড়ে দেয়া না হয়। এখানে বোঝানো হয়েছে যে, ঢাল দ্বারা যেমন মানুষ আত্মরক্ষা করতে পারে, তদ্রূপ রোযা দ্বারাও মানুষ আত্মরক্ষা করতে পারে। ঢাল দ্বারা আত্মরক্ষা হয় শত্রুর আক্রমন থেকে, আর রোযা দ্বারা আত্মরক্ষা হয় গোনাহ্ থেকে এবং জাহান্নাম থেকে। তবে ঢাল দ্বারা মানুষ আত্মরক্ষা করতে পারে, যদি ঢাল ঠিক থাকে, কোন ফাঁটা-ছেড়া না থাকে, কোন ছিদ্র না থাকে। ফাঁটা ছেড়া থাকলে সেই ঢাল দ্বারা আত্মরক্ষা করা যায় না। তদ্রূপ রোযা দ্বারাও আত্মরক্ষা হবে যদি রোযা সহীহ ছালেম থাকে, যদি রোযা আস্ত থাকে। রোযা যদি ফেঁড়ে-চিরে যায়, তাহলে সেই রোযা দ্বারা আত্মরক্ষা হবে না। এক সাহাবী জিজ্ঞাসা করলেন ইয়া রাসুলাল্লাহ! রোযা আবার কি করে ফেঁড়ে চিরে যায় ? অর্থাৎ, রোযা যে ঢাল, এই ঢাল আবার কিভাবে ফেঁড়ে-চিরে যায় ? নবী (সাঃ) বললেনঃ মিথ্যা এবং গীবত দ্বারা। অর্থাৎ, যদি মিথ্যা বলা হয়, যদি গীবত করা হয়, তাহলে এগুলোর দ্বারা রোযা যে ঢাল, এই ঢাল ফেঁড়ে চিরে যায়, আস্ত থাকেনা। এখানে মুখের দ্বারা যে দুটো বড় গোনাহ্ হয় অর্থাৎ, মিথ্যা বলা এবং গীবত করা এদুটোর কথাই বলা হয়েছে।

এছাড়াও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা যত গোনাহ্ হয় সব থেকেই বিরত থাকতে হবে। বিরত না থাকলে রোযা ভাল থাকবে না। এভাবে সব গোনাহ থেকে বিরত থাকলে এই এক মাসেই গোনাহ্ থেকে বিরত থাকা এবং গোনাহ মুক্ত জীবন জাপন করার একটা অভ্যাস গড়ে উঠবে। এভাবে একটা পবিত্র জীবনের সূচনা করাই হল রোযার উদ্দেশ্য। না খাওয়ায়ে মানুষকে কষ্ট দেয়া রোযার উদ্দেশ্য নয়। কোন ইবাদতের মাধ্যমেই বান্দাকে কষ্ট দেয়া আল্লাহর উদ্দেশ্য নয়।

যদি না খেয়ে কষ্ট করাই রোযার উদ্দেশ্য হত, 

তাহলে সেহরী না খেয়ে রোযা রাখলেই বেশী উত্তম হত। কারণ তাতে কষ্ট বেশী হত। সেহরী না খাওয়াই তাহলে ফজীলতের বিষয় হত। ইফতারী দেরীতে করাই তাহলে উত্তম হত। অথচ শরীয়তে মাসআলা রাখা হয়েছে সেহ্রী খাওয়া উত্তম। আর ইফতারী সময় হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে বিলম্ব না করেই ইফতার করা উত্তম। তবে রোযা দ্বারা যেহেতু কাম ভাব দমন করাই উদ্দেশ্য, তাই অতি ভোজন ভাল নয়। যদি না খেয়ে কষ্ট করাই রোযার উদ্দেশ্য হত, তাহলে মাসলা রাখা হত যে, সেহ্রী যত আগে খেতে পারবে, আর ইফতারী যত বিলম্বে করতে পারবে ততই উত্তম। অথচ মাসআলা রাখা হয়েছে তার উল্টো। কোন কোন সাহাবী রাসূল (সাঃ)-এর কাছে এরকম অনুমতিও চেয়েছিলেন যে, একাধারে দুইদিন রোযা রাখব। অর্থাৎ, আজ সেহরী খেলাম, তারপর সারাদিন রোযা রাখলাম, রাতেও কোন ইফতারী বা খাবার গ্রহণ করলাম না, সেহরীও খেলাম না, তার পরের দিনও সারাদিন রোযা রাখলাম । দ্বিতীয় দিন ইফতার করলাম। এভাবে এক সাথে ডাবল রোযা রাখার অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু রাসূল (সাঃ) তার অনুমতি দেননি। যদি না খেয়ে কষ্ট করাই রোযার উদ্দেশ্য হত, তাহলে রাসূল (সাঃ) এ রকম রোযা রাখার অনুমতি দিতেন।

মূলতঃ রোযার দ্বারা বান্দাকে কষ্ট দেয়া আল্লাহর উদ্দেশ্য নয়, আসল উদ্দেশ্য হল নফসকে দমন করা এবং গোনাহ্ থেকে বিরত থাকা। গোনাহ মুক্ত জীবন জাপনের একটা অভ্যাস গড়ে তোলা। অতএব যদি এমন হয় যে, আমি রোযাও রাখলাম, গোনাহও করলাম, তাহলে রোযার উদ্দেশ্য আমার দ্বারা বাস্তবায়ন হল না। রোযার আসল উদ্দেশ্য যেহেতু গোনাহ্ থেকে বিরত থাকা, 

তাই বুযুর্গানে দ্বীন পূর্ণাঙ্গ সহীহ রোয়া হওয়ার জন্য ছয়টা শর্তের কথা বলেছেন।

প্রথম নম্বর শর্ত হলঃ

চক্ষুর হেফাজত করা, অর্থাৎ চোখের দ্বারা যেন কোন গোনাহ হতে না পারে। অতএব রোযাকে পরিপূর্ণ সহীহ করতে চাইলে রোযা অবস্থায় নাচ-গান দেখা চলবে না, গায়র মাহরাম নারীর দিকে নজর দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

দ্বিতীয় নম্বর শর্ত হলঃ

যবানের হেফাজত করা, অর্থাৎ, যবান দ্বারা যেন কোন গোনাহ হতে না

পারে। যবানের বড় দুটো গোনাহ হল গীবত করা এবং মিথ্যা বলা। এ সম্পর্কে পূর্বে হাদীছে বয়ান করা হয়েছে। রাসূল (সাঃ)-এর জমানায় দু'জন মহিলা রোযা রেখে খুব কাতর হয়ে পড়ল, তাদের অবস্থা মরণাপন্ন হয়ে দাঁড়াল। সাহাবায়ে কেরাম রাসূল (সাঃ)কে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। রাসূল (সাঃ) তাদের কাছে একটা পেয়ালা পাঠিয়ে দিলেন যে, এই পেয়ালায় যেন তারা বমি করে। বমি করলে দেখা গেল যে, তাতে গোশতের টুকরা এবং তাজা রক্ত পড়েছে। রাসূল (সাঃ) বললেন যে, তারা গীবত করেছে, তাই তাদের এই দুরাবস্থা হয়েছে। কোন মুসলমানের গীবত করার অর্থ হল তার গোশত চিবিয়ে খাওয়া, যা কুরআনে বলা হয়েছে। এটা যে বাস্তব, অমূলক নয়- এটা প্রমাণ করার জন্যই হয়ত আল্লাহ পাক এ ঘটনা ঘটিয়ে দেখিয়েছেন। রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ এই গীবত করার কারণেই তাদের রোযায় কষ্ট হচ্ছে। এ ঘটনা থেকে বোঝা গেল - কোন ইবাদত যদি সহীহ্ তরীকায় করা না হয়, তার মধ্যে যদি গলতী এসে যায়, তাহলে সেই ইবাদতে কষ্ট হয়। রোযার যে সহীহ তরীকা ছিল, ঐ মহিলারা সেই সহীহ তরীকায় রোযা রাখেনি, তারা রোযার মধ্যে গলতী করেছে অর্থাৎ, গীবত করেছে, তাই তাদের রোযায় কষ্ট হয়েছে। আরও অনেক সাহাবী রোজা রেখেছিলেন, তারাতো কেউ কষ্টের অভিযোগ করেননি। অভিজ্ঞতায়ও দেখা যায় রোযায় মুত্তাকী পরহেযগার মানুষের কোন কষ্ট হয় না, ফাসেক ফাজেরদের কষ্ট হয়। আমরা যত ইবাদত করি, অনেক সময় খুব কষ্ট লাগে; নামায পড়তেও কষ্ট লাগে, রোযা রাখতেও কষ্ট লাগে, আরও যত রকম ইবাদত আছে সেগুলো করতেও কষ্ট লাগে। এর একটা কারণ এ-ও যে, আমরা সহীহ তরীকায় করি না। প্রত্যেকটা ইবাদতকে যদি সহীহ তরীকায় করি অর্থাৎ, যেভাবে করা কাম্য সেভাবে করি, তাহলে দেখা যাবে তাতে কোন কষ্ট নেই বরং আরাম

তৃতীয় নম্বর শর্ত হলঃ

কানের হেফাজত করা অর্থাৎ, কানের দ্বারা যত গোনাহ্ হতে পারে, সেগুলোর থেকে বিরত থাকা। গান শোনা, মানুষের গীবত-শেকায়েত শোনা, কুটনামী-চোগলখোরী শোনা ইত্যাদি নিষেধ। এগুলো থেকে বিরত থাকাই হল কানের হিফাজত।

চতুর্থ নম্বর শর্ত হলঃ

শুধু এই তিন অঙ্গই নয় বরং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারাও যে সব গোনাহ্ হতে
পারে, তার থেকেও বিরত রাখা।

পঞ্চম নম্বর শর্ত হলঃ

অতি ভোজন না করা। কারণ অতিভোজন করলে কামভাব ও পশু প্রবৃত্তি দমন হয় না। আর কামভাব ও পশু প্রবৃত্তিকে দমন না করলে গোনাহ বর্জন করা যায় না। বুযুর্গানে দ্বীন নফছের সাথে মুজাহাদা করার জন্য কম খাওয়ার কথা বলতেন। হাদীছেও পেটের তিন ভাগের একভাগ খানা, এক ভাগ পানি আর এক ভাগ খালি রাখার কথা বলা হয়েছে। তবে উলামায়ে কেরাম বলেছেনঃ বর্তমান এই দূর্বলতার যুগে এত কমও খাবে না যাতে রোযা রাখতে, নামায় পড়তে, যিকির-আযকার করতে বা দ্বীনের খেদমতে ব্যাঘাত ঘটে। কম খাওয়ার মোজাহাদার কথা তখনকার যুগে বলা হত, যখন মানুষ সবল ছিল। এখন মানুষ দূর্বল হয়ে এসেছে, এখন বুযুর্গানে দ্বীন এবং ওলামায়ে কেরাম ঐ মুজাহাদার কথা বলেন না যে, পেটের এক ভাগ খানা খাবে, আরেক ভাগ পানি খাবে এবং আরেক ভাগ খালি রাখবে। যাহোক যদি কেউ এরকম হয় যে, কম খেলে দুর্বল হয়ে যাবে, তাহলে সে পেট ভরে খেতে পারে। তবে সারাদিন যেন খাওয়ার দিকেই নজর
না থাকে এবং এতবেশী ইফতারী ও সেহরী না খাওয়া হয় যাতে শরীর অলস হয়ে পড়ে।

ষষ্ট নম্বর শর্ত হলঃ

আল্লাহর কাছে রোযা কবুল হয় কিনা - এই ভয় রাখতে হবে এবং সেভাবে সতর্ক থাকতে হবে। সাথে সাথে আল্লাহর রহমতের আশাও রাখতে হবে। রহমতের আশা এবং আযাবের ভয় -এই মনোভাবের ভিতরে সারাটা দিন কাটাতে হবে।

মূলতঃ
যদি আল্লাহর ভয় কারও মধ্যে এসে যায়, তাহলে সে খাঁটি মানুষ হয়ে যেতে পারে। একমাত্র আল্লাহর ভয়ই এমন এক জিনিস, যার দ্বারা মানুষ গোনাহ্ থেকে বিরত থাকতে পারে। আবার আল্লাহর রহমতের আশাও এমন এক জিনিস, যার কারণে মানুষ অনেক কষ্টকর কাজ করতেও প্রস্তুত হয়ে যায়। চিন্তা করলে দেখা যায় দুনিয়ার মানুষ যত ধরনের কষ্ট করে, তা হয় কোন আশায় করে, কিংবা কোন ভয়ে করে। ভয় আর আশা এর ভিত্তিতেই মানুষ দুনিয়ার সব কিছু করে। যেমন মানুষ আয়-উপার্জনের জন্য কষ্ট করে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কাজ করে। এর পিছনেও ভয় এবং আশা কার্যকরী থাকে। তার এই ভয় থাকে যে, আমি যদি কাজ না করি, তাহলে অভাবে পড়তে হবে। আবার আশাও থাকে যে, যদি কাজ করি, তাহলে অভাব দূর হবে, গাড়ী-বাড়ি হবে, সুখ-শান্তি হবে, আরাম-আয়েশ হবে ইত্যাদি। এভাবে দেখা যায় ভয় আর আশা-এর কারণেই মানুষ দুনিয়াতে সব কিছু করে। দ্বীনের কাজ করার ক্ষেত্রেও এরকম ভয় এবং আশা উভয়ই রাখতে হয়। আল্লাহর রহমতের আশা এবং তার আযাবের ভয় এ দুটো যদি এসে যায়, তাহলে মানুষের দ্বীনও দোরস্ত হয়ে যায়। এ দুটো এসে গেলে মানুষ দ্বীনের জন্য যে কোন কষ্ট করতে প্রস্তুত হয়ে যায়। তাই রোযাটাকে যদি পূর্ণাঙ্গ ভাল করতে হয়, তাহলে আল্লাহ্র আযাবের ভয় এবং আল্লাহ্র রহমতের আশা উভয়ই রাখতে হবে। এভাবে ছয়টা আদর পালনের মাধ্যমে পুরো রমজান কাটবে গোনাহ্ মুক্ত অবস্থায়।

শুধু গোনাহ্ মুক্ত অবস্থায় নয়, 

সেই সাথে সাথে পুরো রমজান কাটবে ইবাদতের মধ্যে। দিন কাটবে রোযা ও তেলাওয়াতের মধ্যে, আর রাত কাটবে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের মধ্যে। বুযুর্গানে দ্বীন রমজানে কি পরিমাণ সময় তেলাওয়াত ও তাহাজ্জুদের মধ্যে কাটাতেন, তা আমাদের জন্য চিন্তা করাও কঠিন। এই নিকট অতীতে শায়খুল হাদীছ হযরত মাওলানা জাকারিয়া (রহঃ)- যার লেখা “ফাযায়েলে আ'মাল” কিতাব মসজিদে মসজিদে তা'লীম হয়- তিনি প্রতি রমযানে ৬০ খতম কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করতেন। প্রতিদিন দিনের বেলায় এক খতম, আর রাতে তাহাজ্জুদে এক খতম। এভাবে প্রতিদিন দিনের বেলায় এক খতম রাতের বেলায় এক খতম করে মোট ৬০ খতম তেলাওয়াত করতেন। আর তারাবীহতে হত এক খতম। এই সর্বমোট ৬১ খতম তেলাওয়াত হত। এরকম ছিল বুযুর্গানে দ্বীনের আমল। বুযুর্গানে দ্বীনের এসব আমল আমাদের সামনে রাখলেই আমরা বুঝতে পারব আমাদের আমল কত কম।

রমযানের সাথে কুরআন তেলাওয়াতের একটা খাচ সম্পর্ক আছে। 

রমযান মাসকে বলাই হয় কুরআনের মাস। কারণ এ মাসেই কুরআন নাযিল হয়েছিল। কুরআনে বলা হয়েছেঃ

شهر رمضان الذي انزل فيه القران

(সুরা বাকারা : ১৮৫)

অর্থাৎ, রমযান মাস, এ মাসে কুরাআন নাযিল হয়েছে। এ আয়াতে আল্লাহ পাক রমজান মাসের
পরিচয় দিয়েছেন কুরআনের মাস বলে। তাই রমযান মাসের সাথে কুরআন তেলাওয়াতের একটা বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। রাসূল (সাঃ)ও অন্য সময় যত তেলাওয়াত করতেন, রমযান মাসে তার চেয়ে বেশী তেলাওয়াত করতেন। তাই রমযানে বেশী বেশী তেলাওয়াত করা চাই। রমযান মাসে রোযা এবং তারাবীহ-র পর এই তেলাওয়াত হল একটা বিশেষ আমল।

এক হাদীছে রমযান মাসে আরও চারটা বিশেষ আমলের কথা বলা হয়েছে।

রাসূল (সাঃ) বলেনঃ

اسْتَكْثرو وافيه من أربع خصال، خصلتين تُرضُونَ بِهِمَا رَبَّكُمْ ، وَخصلَتين لَا غِناءَ بِكُمْ عَنْهُما -

অর্থাৎ, রমযান মাসে তোমরা চারটা আমল বেশী বেশী করবে। দুইটা আমল এমন যাতে আল্লাহ পাক

সন্তুষ্ট হন। আর দুইটা আমল এমন যা না করে তোমাদের কোন উপায় নেই। অতঃপর রাসুল (সাঃ) বলেনঃ

فاما الخصلتان اللتان ترضون بهما رككُم فشهادة أَن لا إله إلا الله

অর্থাৎ, যে দুটো আমল করলে আল্লাহ পাককে সন্তুষ্ট করতে পারবে, সে দুটো হল 

বেশী বেশী “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” পড়া 

এবং 

বেশী বেশী আল্লাহর কাছে এস্তেগফার করা 

অর্থাৎ, মাফ চাওয়া। এ হাদীছ থেকে। বোঝা গেল বেশী বেশী লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করা হলে এবং আল্লাহর কাছে বেশী বেশী ক্ষমা চাওয়া হলে আল্লাহ পাক খুশী হন। এ দুটো আমল তো সব সময়ই করতে হবে, তবে রমজান মাসে বেশী বেশী করতে বলা হয়েছে।

এরপর রাসূল (সাঃ) বললেনঃ

واما الخصلتان اللتان لا غناء بكم عنها فسالون الله الجنة وتعوذون به من النار ، (رواه ابن خزيمة في

অর্থাৎ, আর যে দুটো আমল না করে তোমাদের কোন উপায় নেই, সে দুটো হল

আল্লাহর কাছে জান্নাত চাওয়া

এবং
জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া।

বাস্তবেও জান্নাত চাওয়া এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া ছাড়া আমাদের কোন উপায়ই নেই। এটা সব সময়ই চাইতে হবে, তবে রমযান মাসে বেশী বেশী চাইতে বলা হয়েছে।

এই হল সর্বমোট চারটা আমল

বেশী বেশী লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করা,
বেশী বেশী আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া,
বেশী বেশী জান্নাত পাওয়ার জন্য দুআ করা
এবং বেশী বেশী জাহান্নাম থেকে পানাহ চাওয়া।

এর সাথে সাথে বেশী বেশী কুরআন তেলাওয়াত করা এবং গোনাহ্ মুক্ত থাকা এবং রোযা, তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ- এই আমলগুলির মধ্যে কাটাতে হবে রমযান।

আল্লাহ পাক আমাদেরকে তাওফীক দান করুন। আমীন!

واخر دَعْوَانَا إِنِ الْحَمْدُ لِله رب الْعُلَمينَ

Share This