তারিখ

কুমিল্লায় এখন সময়

,বঙ্গাব্দ
Welcome To My Websites

ঈদে মিলাদুন্নবী ১/ঈদ কি? ২/ইসলামে ঈদ বলতে কি বুঝায়? ৩/মিলাদুন্নবী কী?

Jumar boyan

তিনটি পর্ব লেখা হবে, তিন jumay আলোচনা করতে পারেন, মুখস্থ বলতে পারলে ভালো, তবে মুখস্থ বলাটা আবশ্যক নয়। 
লেখাটি ফটোকপি করে পাতাগুলো মসজিদে নিয়ে যেতে পারেন, ল্যাপটপ বা আইপেড সামনে রেখেও boyan করতে পারেন,যেহেতু বিষয়গুলো ঐতিহাসিক, সেহেতু মুখস্থ বলার চাইতে লেখাগুলো সামনে রেখে boyan করা অধিকতর নিরাপদ। 

পর্ব-১
(১-৭) 
প্রথম jumay

সংক্ষেপে, 
ঈদে মিলাদুন্নবী
১/ঈদ কি? 
২/ইসলামে ঈদ বলতে কি বুঝায়? 
৩/মিলাদুন্নবী কী? 
৪/জন্মবার কবে? 
৫/জম্ম তারিখ কবে? (মতভেদ সহ) 
৬/ঈদে মিলাদুন্নবী কখন থেকে শুরু? 
৭/মিলাদুন্নবী তে করনীয় কী? 
৮/মিলাদুন্নবী কে কেন্দ্র করে বিদআত পরিত্যাজ্য। 
৯/কেউ কেউ বলেন যে  ‘নবিজি করেননি, নিষেধও তো করেননি।’ এর জবাব কী? 
১০/তখন তারা বলেন, ‘এই যে বাস, ফ্যান, মোবাইল, উড়োজাহাজ বিজ্ঞানের এইসব নানা আবিষ্কার, এগুলোও তো নবীযুগে ছিল না, তাহলে কি এগুলো ব্যবহার করাও বিদআত? এর জবাব কী? 
১১/তাদের এই প্রশ্নও করতে শোনা যায় যে, ‘এতদিন ধরে সমাজের এত মানুষ করছে, তারা সবাই কি ভুল করছে? এর জবাব কী? 
১২/সর্বশেষ কথা হলোঃ আমাদের কর্তব্য সম্পর্কে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশনা দিয়েছেন, তোমরা কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরে রাখবে। 

 আলোচনা শুরু। 
১/ঈদ কী? 
আনন্দ উৎসব কে ঈদ বলা হয়, 

২-/ইসলামে ঈদ বলতে বুঝায় রমজান সমাপ্ত হওয়ার পর এবং জিলহজের দশ তারিখে ইসলামের দিকনির্দেশনা মোতাবেক আনন্দ প্রকাশ করা। 

ইসলামের নির্দেশনা মোতাবেক মুসলমানদের জন্য ধর্মীয় দুটি উৎসব রয়েছে ১.ঈদুল ফিতর ২.ঈদ উল আজহা। 

আমরা তিনটি বর্ননা জানব, 
বর্ননা-১
عَنْ أَنَسٍ، قَالَ قَدِمَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْمَدِينَةَ وَلَهُمْ يَوْمَانِ يَلْعَبُونَ فِيهِمَا فَقَالَ ‏"‏ مَا هَذَانِ الْيَوْمَانِ ؟ قَالُوا كُنَّا نَلْعَبُ فِيهِمَا فِي الْجَاهِلِيَّةِ ‏

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাদীনাতে এসে দেখেন, মাদীনাহবাসীরা নির্দিষ্ট দু’টি দিনে খেলাধুলা ও আনন্দ করে থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেনঃ এ দু‘টি দিন কিসের? সকলেই বললো, জাহিলী যুগে আমরা এ দু’ দিন খেলাধুলা করতাম।

فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ‏ إِنَّ اللهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا يَوْمَ الأَضْحَى وَيَوْمَ الْفِطْرِ
 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মহান আল্লাহ তোমাদের এ দু’ দিনের পরিবর্তে উত্তম দু‘টি দিন দান করেছেন। তা হলো, ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিত্বরের দিন।
আবু দাউদ-১১৩৪

বর্ননা-২

عَنْ ابْنِ عُمَرَ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم وَأَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا يُصَلُّونَ الْعِيدَيْنِ قَبْلَ الْخُطْبَةِ

ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকর এবং ‘উমার (রাযি.) উভয় ‘ঈদের সালাত খুৎবার আগে আদায় করতেন।
বুখারী- ৯৬৩

বর্ননা-৩
عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ، قَالَ صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم غَيْرَ مَرَّةٍ وَلَا مَرَّتَيْنِ الْعِيدَيْنِ بِغَيْرِ أَذَانٍ وَلَا إِقَامَةٍ
জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে দুই ঈদের সলাত আযান ও ইক্বামাত(ইকামত/একামত) ছাড়া এক দুইবার নয়, বরং অনেকবার আদায় করেছি।
আবু দাউদ-১১৪৮

৩/মিলাদুন্নবী কী?
মিলাদ শব্দের অর্থ জন্ম বা জন্মদিবস। ‘মিলাদুন্নবী’ বলতে আমরা বুঝি, আমাদের নবী মুহাম্মাদ সা. এর জন্ম বা জন্মদিবস।

৪/জন্মবার কবে?
                عن عبد الله بن عباس
 وُلِدَ النبيُّ ﷺ يومَ الاثنينِ واستُنْبِئَ يومَ الاثنينِ وتوفيَ يومَ الاثنينِ وخرج مهاجرًا من مكةَ إلى المدينةِ يومَ الاثنينِ وقَدِمَ المدينةَ يومَ الاثنينِ ورُفِعَ الحجرُ الأسودُ يومَ الاثنينِ.
أحمد شاكر (ت ١٣٧٧)
مسند أحمد ٤‏/١٧٢  إسناده صحيح
ইবনে আব্বাসের বর্ননা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোমবারে জন্মগ্রহণ করেছেন। 
মুসনাদে আহমদ ৪/১৭২

৫/জম্ম তারিখ কবে? (মতভেদ সহ) 
জন্ম তারিখ সম্পর্কে বিভিন্ন ধরণের বর্ণনা পাওয়া যায়। নিম্নে বর্ণনাগুলো উল্লেখ করা হলোঃ

১.রবিউল আউয়াল এর দুই তারিখ।

২.রবিউল আউয়াল এর আট তারিখ।

৩.রবিউল আউয়াল এর দশ তারিখ।

৪.রবিউল আউয়াল এর বার তারিখ।

৫.রবিউল আউয়াল এর সতের তারিখ।

৬.রবিউল আউয়াল এর আট দিন বাকী থাকতে।

৭.রমযান মাসের বার তারিখ। 
(আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২/২৮২)

এসব বর্ণনার মধ্য থেকে হাফেজ ইবনে কাছির রহ. আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ এর মধ্যে ‘দুই’ ‘আট’ ও বার’ তারিখের কথা গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করেছেন। তাই আমরা শুধু এই তিনটি তারিখ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। ইনশাআল্লাহ।

দুই তারিখের দলীলঃ

قال محمد بن سعد اخبرنا محمد بن عمربن واقد الاسلمى الواقدى قال: كان ابومعشر نجيح بن عبد الرحمن المدنى يقول: ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم يوم الاثنين لليلتين خلتامن شهر ربيع الاول.

ইবনে সাআদ তার উস্তাদ ওয়াকেদী এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, আবূ মা‘শার আল-মাদানী বলতেন, রবিউল আউয়াল মাসের দুই তারিখ সোমবার নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্ম গ্রহণ করেছেন।’ (তবাকাতে ইবনে সাআদ ১/৪৭)

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হল, এ বর্ণনার রাবী ওয়াকেদী ও তার উস্তাদ আবূ মা‘শার উভয়েই ‘যয়ীফ’। রিজাল শাস্ত্রের প্রসিদ্ধ ইমাম হাফেজ ইবনে হাজার আসকলানী রহ. ওয়াকেদী সম্পর্কে বলেনঃ
                                      متروك مع سعة علمه 
প্রশস্ত জ্ঞানের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তিনি পরিত্যাজ্য।’ তাকরীবুত তাহযীব পৃ.৪৯৮) 
আর আবূ মা‘শার সম্পর্কে বলেছেনঃ ضعيفসে যয়ীফ’ (তাকরীব পৃ. ৫৫৯) অতএব দুই তারিখের বর্ণনাটির বর্ণনাকারীরা মাতরুক ও যয়ীফ হওয়ায় এমতটি গ্রহণ করা গেল না।

আট তারিখের দলীলঃ

জেনে রাখা উচিত যে, হস্তি বাহিনী যে বছর মক্কায় হামলা করেছিল সেবছরই রবিউল আউয়াল মাসে নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম হয়। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সকল ইতিহাসবিদ উলামায়ে কেরাম একমত।

ইবনে কাছীর রহ. বলেনঃ

قال ابن اسحاق: وكان مولده عليه السلام عام الفيل وهذا هو المشهور عند الجمهور. قال ابراهيم بن المنذر الحزامى: هو الذى لايشك فيه احدمن علمائنا انه عليه السلام ولد عام الفيل
ইমামুল মাগাযী ইবনে ইসহাক বলেছেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম হস্তি বাহিনীর বছর হয়েছিল। এটিই জমহুরের নিকট প্রসিদ্ধ অভিমত। আর ইবরাহীম বিন মুনযির রহ. বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম হস্তি বাহিনীর বছর হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের উলামাদের নিকট কোনো সন্দেহ নেই। 
(আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২/২৮৩)

অতএব, এতটুকু নিশ্চিতভাবে সাব্যস্ত হলো যে, হস্তি বাহিনীর মক্কায় আক্রমণের বছর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম হয়েছিল। এখন প্রশ্ন থেকে যায় যে, হস্তি বাহিনীর হামলার কয়দিন পর নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম হয়ে ছিল? হাফেজে হাদীস ইমাম সুহায়লী, ইমাম ইবনে কাছীর, ইমাম মাসঊদী রহ. এর নিকট বিশুদ্ধতম মত হল, হস্তি বাহিনী মক্কায় হামলার পঞ্চাশ দিন পর নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্ম গ্রহণ করেছেন। আবূ বকর মুহাম্মাদ বিন মূসা আল খাওয়ারেযেমী রহ. বলেন, হস্তি বাহিনী মক্কায় হামলা করে মুহাররম মাসের তের দিন বাকী থাকতে। তখন থেকে পঞ্চাশ দিন পর নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্ম গ্রহণ করলে জন্ম দিবস আটই রবিউল আউয়াল হয়। অতএব, সাব্যস্ত হলো যে, উল্লেখিত বড় বড় ইমামদের মতে নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম হয়েছিল আটই রবিউল আউয়াল। 
আরো বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ফী সীরাতি খাইরিল ইবাদ ১/৩৩৫)

বার তারিখের দলীলঃ

হাফেজ ইবনে কাছীর রহ. বার তারিখের দলীল সম্পর্কে বলেনঃ

وقيل لثنتي عشرة خلت منه, نص عليه ابن اسحاق ورواه ابن ابى شيبة فى مصنفه عن عفان بن مسلم عن سعيد بن مينا عن جابر وابن عباس رضى الله عنهما انهما قالا: ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم عام الفيل يوم الاثنين الثانى عشر من شهر ربيع الاول وفيه بعث وفيه عرج به الى السماء وفيه هاجر وفيه مات, وهذا هوالمشهور عند الجمهور و الله اعلم.

‘ইবনে ইসহাক রহ. বার তারিখের মতটি স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। আর ইবনে আবী শাইবা তার ‘মুসান্নাফ’ গ্রন্থে আফফান ইবনে মুসলিম এর সূত্রে সাঈদ ইবনে মীনা থেকে বর্ণনা করেন যে, জাবের (রাযি.)ও ইবনে আব্বাস (রাযি.) বলেছেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হস্তি বাহিনীর মক্কায় আক্রমণের বছর রবিউল আউয়াল মাসের বার তারিখ সোমবার জন্ম গ্রহণ করেন। আর রবিউল আউয়াল মাসে তাকে নবুওয়াত দেয়া হয় এবং এ মাসে তাঁর মে‘রাজ হয় এবং এ মাসেই তিনি হিজরত করেন আর এ মাসেই তিনি ইন্তিকাল করেন। (হাফেজ ইবনে কাছীর বলেন,) জমহুরের নিকট এ মতটিই প্রসিদ্ধ। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২/২৮৩)

এখানে দুইটি বিষয় লক্ষণীয়ঃ

১. বার তারিখের দলীল হিসেবে একটি হাদীস পেশ করা হল। এই হাদীসের রাবী আফফান বিন মুসলিম ও সাঈদ বিন মীনা উভয়ে নির্ভরযোগ্য। তবে আফফান বিন মুসলিম সাঈদ বিন মীনা থেকে সরাসরি হাদীস শুনতে পাননি। কারণ সাঈদ বিন মীনার ইন্তেকাল হয় ১১০ হিজরীর দিকে। 
আর আফফান বিন মুসলিমের জন্মই হয় ১৩৪ হিজরীর দিকে। 
(সূত্রঃ সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৯/২৫)

উপরের কথা দ্বারা বুঝা গেল যে, আফফান বিন মুসলিম এবং সাঈদ বিন মীনা উভয়ের মাঝে একজন রাবী আছে যার নাম এই সনদে উল্লেখ করা হয় নি। তাই এই হাদীসটি মুনকাতে হয়ে গেল। আর মুনকাতে হাদীস দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।

২. হাফেজ ইবনে কাছীর রহ. এই মতটি বর্ণনা করার পর বলেছেন, এই মতটি জমহুরের নিকট প্রসিদ্ধ’ লক্ষণীয় বিষয় হলো, এই মতটিকে তিনি প্রসিদ্ধ বলেছেন বটে কিন্তু বিশুদ্ধ বলেননি; বরং আট তারিখের মতকেই তিনি প্রকারান্তরে বিশুদ্ধ বলেছেন। জেনে রাখা উচিত যে, সব প্রসিদ্ধ বিষয়ই বিশুদ্ধ হয় না; বরং সমাজে অনেক এমন প্রসিদ্ধ বিষয় রয়েছে যা বিশুদ্ধ নয়। আমাদের মনে হয় এখানেও তেমনটিই ঘটেছে।

যাই হোক উপরিউক্ত আলোচনা দ্বারা একথা সাব্যস্ত হল যে, বড় বড় মুহাদ্দিস ইমাম ও ইতিহাসবিদগণের মতে নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম রবিউল আউয়াল মাসের আট তারিখ সোমবার জন্ম গ্রহণ করেছেন। ঐতিহাসিক বিবেচনায় এটাই বিশুদ্ধ অভিমত। বার তারিখের দলীল সম্পর্কীয় হাদীস ‘মুনকাতে’। তাই বার তারিখের অভিমত প্রসিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও বিশুদ্ধ নয়।

১. সহীহ বুখারীতে আছে যে, দশম হিজরীতে যখন নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সর্বকনিষ্ঠ ছেলে ইবরাহীম (রাযি.) ইন্তেকাল করেন তখন সূর্য গ্রহণ হয়েছিল। আর তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বয়স ৬৩ বছর চলছিল।

২. গাণিতিক হিসেবে সাব্যস্ত হয় যে, দশম হিজরীর সেই সূর্য গ্রহণ খ্রিষ্টীয় ৬৩২ সালের জানুয়ারি মাসে সকাল আটটা ত্রিশ মিনিটে হয়েছিল।

৩. চান্দ্র মাস হিসেবে এ সময় থেকে ৬৩ বছর পিছনে ফিরে গেলে দেখা যায় যে, নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম ৫৭১ সালে হয়ে ছিল। আর এ সময় রবিউল আউয়াল মাসের প্রথম তারিখ মোতাবেক ১২ই এপ্রিল হয়।

৪. জন্ম তারিখ সম্পর্কে যদিও মতভেদ রয়েছে, কিন্তু এ ক্ষেত্রে সবাই একমত যে, নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম রবিউল আউয়াল মাসের কোনো এক সোমবার হয়েছে। আর নির্ভরযোগ্য মতগুলো ৮-১২ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ।

৫. রবিউল আউয়াল এর ৮-১২ তারিখের মধ্যে সোমবার হয় নয় তারিখ। এসব কারণে নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম খ্রিষ্টীয় ৫৭১ সালের ২০শে এপ্রিল হয়েছিল। (সীরাতুন নবী ১/১১৭)

৬/ঈদে মিলাদুন্নবী কখন থেকে শুরু?
অনুসন্ধানে জানা যায়, ৬০৪ হিজরী সনে ইরাকের মসোল শহরের বাদশাহ আবু সাঈদ মুজাফফর উদ্দীন কাওকারী 
[মৃত-৬৩০ হিজরী]
এবং আবুল খাত্তাব ওমর বিন দিহইয়া 
[মৃত্যু-৬৩৩ হিজরী] এর মাধ্যমে সর্বপ্রথম প্রচলিত পদ্ধতির মিলাদ মাহফিলের সূচনা হয়।

সে সময় শুধুমাত্র ১২ ই রবিউল আওয়ালে তা পালন করা হতো। কিন্তু পরবর্তীতে তা যেকোন দুআর অনুষ্ঠানেই পালন করা শুরু হয়।

উক্ত দরবারী আলেম আবুল খাত্তাব বিন ওমর বিন দিহয়া সর্বপ্রথম মিলাদ মাহফিলের বৈধতা প্রদান করে “আততানবীর ফী মাওলিদিসসিরাজিম মুনীর” নামে একটি গ্রন্থ রচনা করে। ফলে বাদশা খুশি হয়ে উক্ত আলেমকে কে হাজার দিনার বখশীশ দান করেন।

উক্ত আলেম সম্পর্কে আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ লিখেন-

كثير الوقيعة في الأئمة وفي السلف من العلماء خبيث اللسان أحمق شديد الكبر قليل النظر في أمور الدين متهاونا

সে পূর্ববতী ইমাম ও আলেম উলামাদের সাথে বেয়াদবীমূলক আচরণ করতো। সে ছিল অশ্লীলভাষী, প্রচন্ড নির্বোধ, অহংকারী দ্বীন সম্পর্কে সংকীর্ণমনা ও অলস। {লিসানুল মিযান-১/৩৩৮}

৭/মিলাদুন্নবী তে/জন্মদিনে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি আমল করতেন? 

عَنْ أَبِي قَتَادَةَ الأَنْصَارِيِّ، رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم سُئِلَ عَنْ صَوْمِهِ قَالَ فَغَضِبَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ عُمَرُ رضى الله عنه رَضِينَا بِاللَّهِ رَبًّا وَبِالإِسْلاَمِ دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولاً وَبِبَيْعَتِنَا بَيْعَةً
আবূ কাতাদাহ আল আনসারী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সওম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল। এতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসন্তুষ্ট হলেন। তখন উমর (রাযিঃ) বললেন, আমরা আল্লাহর উপর (আমাদের) প্রতিপালক হিসেবে, ইসলামের উপর (আমাদের) দীন হিসেবে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর (আমাদের) রসূল হিসেবে এবং আমাদের কৃত বাই’আতের উপর আমরা সন্তুষ্ট।

قَالَ فَسُئِلَ عَنْ صِيَامِ الدَّهْرِ فَقَالَ ‏"‏ لاَ صَامَ وَلاَ أَفْطَرَ ‏"‏ ‏ أَوْ ‏"‏ مَا صَامَ وَمَا أَفْطَرَ ‏"‏ ‏
অতঃপর সারা বছর সওম পালন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল। তিনি বললেন, সে সওম পালন করেনি, ইফত্বারও করেনি, সে সওম পালন করেনি এবং সওমহীনও থাকেনি।

قَالَ فَسُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمَيْنِ وَإِفْطَارِ يَوْمٍ قَالَ ‏"‏ وَمَنْ يُطِيقُ ذَلِكَ ‏"‏
অতঃপর একাধারে দু'দিন সওম পালন করা ও একদিন সওম পালন না করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল। তিনি বললেন, এভাবে সওম পালনের সামর্থ্য কার আছে?

قَالَ وَسُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمٍ وَإِفْطَارِ يَوْمَيْنِ قَالَ ‏"‏ لَيْتَ أَنَّ اللَّهَ قَوَّانَا لِذَلِكَ ‏"‏ ‏
অতঃপর একদিন সওম পালন ও দু'দিন সওম ত্যাগ করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল। তিনি বললেন, আল্লাহ যেন আমাদের এরূপ সওম পালনের সামর্থ্য দান করেন।

قَالَ وَسُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمٍ وَإِفْطَارِ يَوْمٍ قَالَ ‏ ذَاكَ صَوْمُ أَخِي دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ ‏"‏
অতঃপর একদিন সওম পালন করা ও একদিন না করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল। তিনি বললেন, তা আমার ভাই দাউদ (আঃ) এর সওম।

قَالَ وَسُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ الاِثْنَيْنِ قَالَ ‏"‏ ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيهِ وَيَوْمٌ بُعِثْتُ أَوْ أُنْزِلَ عَلَىَّ فِيهِ ‏"‏
অতঃপর সোমবারের সওম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, এ দিন আমি জন্মলাভ করেছি এবং এ দিনই আমি নুবুওয়াতপ্রাপ্ত হয়েছি বা আমার উপর (কুরআন) নাযিল করা হয়েছে।

قَالَ فَقَالَ ‏ صَوْمُ ثَلاَثَةٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ وَرَمَضَانَ إِلَى رَمَضَانَ صَوْمُ الدَّهْرِ
 তিনি আরও বললেন, প্রতি মাসে তিনদিন এবং গোটা রমযান মাস সওম পালন করাই হল সারা বছর সওম পালনের সমতুল্য।

قَالَ وَسُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ عَرَفَةَ فَقَالَ ‏"‏ يُكَفِّرُ السَّنَةَ الْمَاضِيَةَ وَالْبَاقِيَةَ ‏"‏
অতঃপর আরাফাহ দিবসের সওম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, তাতে পূর্ববর্তী বছর ও পরবর্তী বছরের গুনাহের কাফফারাহ হয়ে যাবে।

قَالَ وَسُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ عَاشُورَاءَ فَقَالَ ‏"‏ يُكَفِّرُ السَّنَةَ الْمَاضِيَةَ
অতঃপর আশুরার সওম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, বিগত বছরের গুনাহের কাফফারাহ হয়ে যাবে।
সহিহ মুসলিম-১১৬২

নবির জন্মদিন পালনের পদ্ধতি তাঁর নিজের কর্ম থেকেই জানতে পারলাম।
Share This