ডা. জাহাঙ্গীর কবির এর ডায়েট চার্ট : নতুনরা যেভাবে শুরু করবেন
আপনারা হয়তো নানা জনের মুখ থেকে বা ডা. জাহাঙ্গীর কবির স্যারের ভিডিওগুলো দেখে বুঝতে পারছেন ডায়াবেটিস রোগী, ওষুধবিহীন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখছেন এবং মোটা বা স্থূল মানুষগুলো খুব অল্প দিনেই শরীরের স্থূলতা কমিয়ে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে উঠেছেন, কিন্তু আপনারা অনেকেই ডায়েটে যেতে বা শুরু করতে ভয় পাচ্ছেন, তার একটাই কারণ- আপনাদের মস্তিষ্কের একটি বদ্ধমূল ধারণা, আর সেটা হলো, জন্মের দুই তিন বছর পর থেকেই যেখানে আমাদের খাদ্যাভ্যাস গড়ে উঠেছে ভাত, রুটি, মাছ, মাংসের উপর সেখানে ভাত রুটিবিহীন জীবন যাপন যেন পাগলের প্রলাপ। কিন্তু এই বদ্ধমূল ধারণা বা ঐতিহ্য, স্যারের পরামর্শে কিছু মানুষ যখন কাঁচের টুকরোর মতো ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেয় তখন হয়তো আপনাদের মনে বিশ্বাস প্রতিস্থাপন হয়। আর তাদের জন্যই আমার এই লেখা।
Post authorBy মাসিক আদর্শ নারী
Post dateFebruary 26, 2020
মূল- ডা. জাহাঙ্গীর কবির
শ্রুতিলিখন- আবুল কালাম আজাদ
————————————–
“বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর” কথাটি অনেকের কাছে গ্রহণ যোগ্যতা না পেলেও যখন বিশ্বাসটি বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত এবং অনেক মানুষ কর্তৃক পরীক্ষিত। তখন কিন্তু আর বিশ্বাসটি অবিশ্বাসের জায়গায় বসে থাকে না, বা তার গ্রহণ যোগ্যতা নিয়েও কোন প্রশ্ন তোলার অবকাশ থাকে না।
কথা বলছিলাম ডাঃ জাহাঙ্গীর কবির স্যারের দেওয়া ডায়েট প্রসঙ্গ নিয়ে। আপনারা হয়তো নানা জনের মুখ থেকে বা স্যারের ভিডিওগুলো দেখে বুঝতে পারছেন ডায়াবেটিস রোগী, ওষুধবিহীন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখছেন এবং মোটা বা স্থূল মানুষগুলো খুব অল্প দিনেই শরীরের স্থূলতা কমিয়ে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে উঠেছেন, কিন্তু আপনারা অনেকেই ডায়েটে যেতে বা শুরু করতে ভয় পাচ্ছেন, তার একটাই কারণ- আপনাদের মস্তিষ্কের একটি বদ্ধমূল ধারণা, আর সেটা হলো, জন্মের দুই তিন বছর পর থেকেই যেখানে আমাদের খাদ্যাভ্যাস গড়ে উঠেছে ভাত, রুটি, মাছ, মাংসের উপর সেখানে ভাত রুটিবিহীন জীবন যাপন যেন পাগলের প্রলাপ। কিন্তু এই বদ্ধমূল ধারণা বা ঐতিহ্য, স্যারের পরামর্শে কিছু মানুষ যখন কাঁচের টুকরোর মতো ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেয় তখন হয়তো আপনাদের মনে বিশ্বাস প্রতিস্থাপন হয়। আর তাদের জন্যই আমার এই লেখা।
প্রতিজ্ঞা, ধৈর্য, এবং সহনশীলতা, এই তিনটা জিনিস আপনাকে ডায়েট শুরু করার আগে নিজের অনুকূলে আনতে হবে।
প্রতিজ্ঞা হলো সেই বিষয়টা, আপনার এমন একটা মনোভাব থাকতে হবে, আমাকে পারতেই হবে। দশজনে যেটা পারছে সেটা আমি কেন পারবো না?
প্রতিটি বিষয়ে কিছু ধৈর্যের প্রয়োজন হয়। হুট করেই আপনার এক দিনে দশ কেজি ওজন কমে যাবে না বা এক দিনেই দশ বছরের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসবে না। এর জন্য আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে, অনুশীলন করতে হবে এবং নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মানতে হবে।
আর সহনশীলতা হলো সেটাই। আপনার পরিবার, পরিজন, বন্ধু বান্ধব বা সমাজের মানুষ গুলোর কাছ থেকে প্রাথমিক ভাবে তিরস্কার বা অনীহা আসবে আর সেটা হাসি মুখে গ্রাহ্য করাটাই সহনশীলতা। অনেক জনে অনেক কথা বলবে সেগুলোকে এড়িয়ে চলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ, কিন্তু আপনি যখন সফল হবেন তখন আপনিই হবেন তাদের কাছে আইডল। সবাই তখন আপনার কাছে পরামর্শের জন্য লাইন ধরবে।
তো কথা না বাড়িয়ে কিভাবে ডায়েট শুরু করবেন তা বিস্তারিত বর্ণনা করা যাক। আশা করি বিষয় গুলো মনোযোগ দিয়ে পড়বেন এবং মানার চেষ্টা করবেন। যা কিছু উল্লেখ করছি তা সম্পূর্ণটাই ডাঃ জাহাঙ্গীর কবির স্যারের বিভিন্ন ভিডিও এবং রোগীদের সাক্ষাৎকার থেকে নেওয়া।
আপাতত মোটেও খাওয়া যাবে না-
চালের তৈরি সব কিছু ( ভাত, চাউলের রুটি, চাল দিয়ে বানানো দ্রব্যাদি)
গমের তৈরি সব কিছু (রুটি, পাউরুটি, বিস্কুট যে কোন প্রকার, গম দিয়ে বানানো অন্যান্য দ্রব্যাদি)
কোন প্রকার ডাল খাওয়া যাবে না।
আলু, মিষ্টি আলু, গাছ আলু বা আলু সাদৃশ্য অন্যান্য আলু, যা শর্করা জাতীয় সবজি যেমন: মূলা।
চিনি এবং চিনি দিয়ে বানানো দ্রব্যাদি পৃথিবীতে যা কিছু আছে।
দই, টক দই, দুধ এবং সরাসরি দুধ দিয়ে বানানো দ্রব্যাদি।
মধু এবং মিষ্টি ফলমূল খাওয়া যাবে না। (কেন খাওয়া যাবে না সেটা পরে ব্যাখ্যা করছি।
সয়াবিন তেল, সূর্যমুখী তেল, রাইস ব্রান ওয়েল, ক্যানোলা ওয়েল এবং সাধারণ কোন তেলে রান্না করা কিছু খাওয়া যাবে না।
ফার্মের মুরগি, যে মুরগীগুলোকে ট্যানারির বর্জ্য থেকে উৎপাদিত খাদ্য ও সয়া খাওয়ানো হয়। গরুর মাংস, যে গরু বা ষাঁড়গুলোকে ইনজেকশনের মাধ্যমে মোটা তাজা করা হয়। একই ব্যাপার খাসির ক্ষেত্রেও ।
যা খাওয়া যাবে বা খেতে বাঁধা নেই-
সবুজ শাক-সবজি (গাজর, কচি সবুজ মিষ্টি কুমড়া খেলে অল্প পরিমাণ )
টক জাতীয় ফল। যেমন- জলপাই, আমলকী, কচি ডাবের পানি।
মাছ, যে কোন প্রকার খেতে পারবেন, তবে তৈলাক্ত দেশীয় মাছের ভেতর পাঙ্গাশ, বোয়াল, ইলিশ, সরপুঁটি, ব্রীগেড, গ্রাসকার্প, বাইম (তৈলাক্ত বা সাগরের মাছ হলে আরো ভালো)।
গরু এবং খাসির মাংস খাওয়া যাবে তবে যে গরু বা খাসিগুলো ইনজেকশন মুক্ত এবং ঘাস, লতা পাতা বা খড়কুটো খেয়ে লালিত পালিত তবে বেশি পরিমাণে খাওয়া যাবে না। এছাড়া
গরু বা খাসির পায়া খাওয়া যাবে, যেটা খাওয়া এই সময়ে খুবই উপকারী। তবে এটাও অল্প পরিমাণে খেতে হবে।
মুরগির ডিম (ফার্ম হলে সমস্যা নেই তবে ওমেগা ৩ বা দেশী মুরগী বা হাস হলে বেশি ভালো)। মাছের ডিমও খেতে চেষ্টা করবেন যথা সম্ভব।
ঘি, অর্গানিক বাটার, এক্সট্রা ভার্জিন ওলিভয়েল, MCT ওয়েল, অর্গানিক Extra virgin cold pressed কোকোনাট ওয়েল। এগুলো সব ভাল শপে পাওয়া যায়। তবে নিজে তৈরী করাটাই শ্রেয়।
যে কোন প্রকার বাদাম। চিনাবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তা বাদাম বা অন্যান্য বাদাম যা আছে। চাইলে বাদাম ব্লেন্ড করে সাথে উপরে উল্লেখিত নারকেল তেল দিয়ে বানাতে পারেন। পিনাট বাটার যেটা খেতে তুলনাহীন তবে খাবেন অল্প।
রং চা বা কফি দুধ চিনি ছাড়া। সবুজ চায়ের সাথে লেবু, আদা, সামান্য লবণ মেশাতে পারেন। কফির সাথে, MCT ওয়েল, মাখন বা ঘি এবং অর্গানিক কোকোনাট অয়েল মিশিয়ে বাটার কফি বানিয়ে খেতে পারেন, এতে ভালো কাজ হবে।
মধু ও মিষ্টি ফল কেন খাওয়া যাবে না?
মধু এবং মিষ্টি ফলে আছে চিনি যা শর্করা হিসাবে আমাদের শরীর গ্রহণ করে। আপনি যখন ডায়েট শুরু করবেন, তখন শর্করা জাতীয় খাদ্য না খাওয়ায় শরীরে শর্করার ঘাটতি দেখা দেবে, তখন শরীর গ্লাইকোজেন পোড়াবে। এরপর গ্লাইকোজেন শেষ হয়ে গেলে কিন্তু আমাদের শরীর তার নিজস্ব প্রক্রিয়ায় শরীরে জমে থাকা চর্বি গলিয়ে সেখান থেকে শক্তি গ্রহণ করবে। কই’য়ের তেল দিয়ে কই ভাজার মতো। একেই বলে ফ্যাট অ্যাডাপটেশন। এখন যদি আপনি মধু, মিষ্টি ফল, চিনি জাতীয় শর্করা খাবার খান তবে আপনার শরীর ফ্যাট বার্নিং না করে এখান থেকেই তার প্রয়োজনীয় শক্তি গ্রহণ করবে। যার ফলশ্রুতিতে আপনার ফ্যাট বার্নিংও হবে না এবং আপনার স্বাস্থ্য এবং ডায়াবেটিসও কন্ট্রোলে থাকবে না। এ কারণেই ডায়েট অবস্থায় সমস্ত প্রকার শর্করা, মধু , মিষ্টি ফল ও চিনি খেতে নিষেধ করা হয়। একটা মিষ্টি খাবেন, দুই তিনটা মিষ্টি ফল খাবেন, এক চামচ চিনি বা মধু খাবেন, এক বেলা ভাত বা রুটি খাবেন, আপনার শরীর ৪৮ ঘণ্টার জন্য ফ্যাট বার্নিং বন্ধ করে দেবে!
যে বিষয় গুলো মানতে হবে এবং করতে হবে
আরও যা কিছু করা প্রয়োজন